হার্ট টাচিং লাভ স্টোরি বাংলায় | ভালোবাশর গোলপো | Heart Touching Love Story
কাল বিকাল পাঁচটায় আমি রবীন্দ্র সরোবর অপেক্ষা করবো।
আচ্ছা। আমি যেই শার্ট টা দিয়েছি সেটা পরে আসবা। হুম। আর শুনো। কি রিক্সা করে আসবা। আচ্ছা। আমি রাখছি এখন রাতে কল দিবো। আর শুনো কষ্ট করে অন্তত ফোনটা রিসিভ করো। হুম।
ফোনটা রেখে চেয়ারটাতে হেলান দিয়ে বসলাম। খুব খিদা পেয়েছে। কিছু না
পেয়ে হাতের কাছে পানির বোতলটা পেলাম। এটা দিয়ে আপাতত কাজ চালাতে হবে। ইলমার বলা সময় মতো ওর দেওয়া
শার্টটা পরে বের হলাম। পকেটে আছে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট, একটা বিশ
টাকার নোট আর একটা পাঁচ টাকার পয়সা। ভাড়া লাগবে চল্লিশ টাকা। বাকি থাকে পঁয়ত্রিশ টাকা। পয়ত্রিশ টাকা দিয়ে আজ রাতের খাবারের ব্যবস্থা করবো ঠিক করলাম।
.
গন্তব্যস্থলে এসে দেখি ইলমার সাথে ওর বান্ধবী মিতা ও আছে। আমাকে দেখে
বলল.আরে সাজিদ ভাইয়া!! কেমন আছেন? হুম ভাল। তুমি?? ভাল।
তারপর মিতা ইলমাকে আমার সামনেই বলল.ইলমা দেখ। আমার বিএফ এই
আংটিটা আমাকে গিফট করছে। সাজিদ ভাইয়া আপনিও দেখেন তো?? সুন্দর না?
সুন্দর জিনিসকে সুন্দর বলতে হয় কিন্তু আমার এটা দেখে গলা শুকিয়ে
গেল। মিতার বিএফ ওকে হীরার আংটি দিয়েছে কিন্তু ইলমাকে গত দেড়
বছরে কিছু দেওয়া হয়েছে কি না ইতিহাস ঘাটাঘাটি করতে হবে। তারপর ইলমা হঠাত আমার হাতটা ধরলো। হঠাত এরকম করার কারণ টা বুঝলাম
না। হাতটা ধরে যেটা বলল শুনে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ও
বলল.
এই শুনো না। আমারো বসুন্ধরাতে একটা আংটি পছন্দ হয়েছে। কিনে
দিবা?? কি বলবো বুঝতে পারছিনা। যদি ইলমা একা হতো তাহলে কিছু একটা
অজুহাত বলতে পারতাম কিন্তু এখন সামনে ইলমার বান্ধবী। যদি আমি এখন না করে দেই তাহলে ইলমা আমার সাথে নিশ্চই রিলেশন ব্রেক আপ করে দিবে।
তখন আমার কি হবে? যা হবার হবে বলেই ফেললাম.আচ্ছা দিবো।
কবে দিবা? তুমি যেদিন বলবা সেদিন।তাহলে এখনি চলো। এখনি?? হুম।
বলেই ইলমা মিতাকে বাই বলে আমার হাত টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাবছি ওকে এখন বলবো যে..ইলমা আমার কাছে টাকা নাই। কিন্তু বলতে ভয় করছে। চুপ করেই ওর সাথে হেঁটে চলছি। তারপর রিক্সা নিলো। কিন্তু রিক্সাওয়ালাকে বলল নিউ মার্কেট যেতে। মনে হয় রিংটা নিউমার্কেট দেখেছে।
নিউমার্কেট পৌছে গেলাম। ইলমা রিক্সা থেকে নেমে আমাকে নামতে বলল। নেমে ভাড়া ইলমা মিটিয়ে হাঁটা দিল।কিন্তু আমার এগোচ্ছে না। আচ্ছা ইলমা কি সেটা খেয়াল করছে না?? ও তো জানে আমার কাছে টাকা নেই।
Vampire love story Bangla
ইলমা আমার হাতটা ধরে হাটছে। হাটতে হাটতে ফুটপাতে একটা দোকানে নিয়ে এসেছে। এখানে অনেক কিছুই বিক্রি করছে। যেমন, কানের দুল, চুড়ি, পায়েল, আংটি আরো অনেক কিছু। কিন্তু সব গুলোর দাম ৫০ টাকার মধ্যে। তারপর আমি জিজ্ঞাসা করলাম
এখানে কেন? আমার আংটি লাগবে না।
একটা পায়েল কিনে দিবা?? আমি কথাটা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মনের মধ্যেকার চিন্তাটা নিমিষে হারিয়ে গেল। মেয়েটা আমাকে খুব ভালবাসে আর খুব বুঝে আমাকে। কি ব্যাপার দিবা না?? আমার কাছে পঁয়ত্রিশ টাকা আছে। তারপর ইলমা দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করলো... ভাইয়া পায়েল প্রতি পিস কতো?? ত্রিশ টাকা পিস আপা। দোকানদারকে একটা ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছিলো। তারপর ওকে একটা পায়েল কিনে দিলাম। রাতের খাবারের টাকাটা শেষ হয়ে গেল সেটার প্রতি আমার কোনো আফসোস নেই কারণ ওর হাসিটা এর চেয়েও বেশি দামী আমার কাছে।
আমি আর ইলমা বসে আছি। ওর পায়ে পায়েলটা বেশ মানিয়েছে। ইলমা আমার কাঁধে মাথা রেখে বলল... টাকা আছে?? আমি চুপ করে রইলাম। ইলমা বুঝলো আমার কাছে টাকা নেই। তারপর ও ওর ব্যাগ থেকে দু হাজার টাকা দিয়ে বলল... এটা রাখো। মেয়েটার কাছ থেকে এর আগেও অনেক টাকা নিয়েছি তাই লজ্জা লাগছিলো। সেজন্য বললাম... না না। আমার টাকা লাগবে না। বাহ। বেশ বড়লোকি দেখাচ্ছো। রাখো বলছি। কথাটা একটু ধমক দিয়েই বলল তাই না করতে পারিনি। টাকাটা নিয়ে বললাম. ধন্যবাদ।
আজ দুদিন যাবত ইলমা আমাকে কল দিচ্ছে না।
কেন দিচ্ছে না সেটা জানি না। আর ফোনে টাকাও নাই যে ফোন দিয়ে জানবো। ওর দেওয়া দুই হাজার টাকা দিয়ে আগের পাওনা মিটিয়ে ফেলেছি। হঠাত ফোনটা বেজে উঠলো। ইলমা কল দিয়েছে। রিসিভ করে বললাম... কেমন আছো?? ভাল। সরি। কেন? দুদিন কথা বলতে পারিনি। আসলে বাড়িতে খুব ঝামেলা হচ্ছে। কি ঝামেলা?? বিয়ে নিয়ে। কথাটা শুনে আমার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।
তারপর কাঁপা গলায় বললাম তোমার? ও কিছুক্ষণ চুপ করে আছে। তারপর বলল... হুম। সামনের শুক্রবার বিয়ে। আমি চুপ করে আছি। কথা বের হচ্ছে না মুখ দিয়ে। ইলমা তারপর বলল.... কাল একটু শেষ বারের মতো দেখা করতে পারবে? কোথায়?? যেখানে সব সময় করি। আচ্ছা। বলেই ফোনটা রেখে দিলাম। হঠাত করে খেয়াল করলাম আমার হাতের উপর এক ফোটা পানি পরলো। ছাদের দিকে তাকালাম কিন্তু পানি দেখলাম না। অতঃপর বুঝতে পারলাম আমার চোখের পানি এটা।
পালিয়ে যেতে পারবে? আমি আর ইলমা বসে আছি।
ওর কথার উত্তর দিতে গিয়ে মনে পরলো আমি আজ দুপুরে খাইনি। দুপুরে খাওয়ার জন্য যে টাকাটা রেখেছিলাম সেটা দিয়ে চাকরীর জন্য আবেদন করে ফেলেছি। বেশ ভাল একটা চাকরী। যদি ভাগ্য ভাল থাকে হয়ত আবার বাবার সামনে যেতে পারবো। আর ইলমাকেও নিজের করে নিতে পারবো। আসলে বাড়ি থেকে বাবার সাথে একবার কথা কাটাকাটি হয় তখনি বাবার উপর রাগ করে এসে পরি।
most romantic love story in bengali
বলে এসেছি যেদিন চাকরী পাবো তখনি যাবো ওদের সামনে।
তারপর থেকেই আমি আলাদা থাকি। এখন প্রায়ই আম্মু আমাকে কল করে বলে ফিরে যেতে কিন্তু আমি যাই না।তাই এই মুহুর্তে ইলমার প্রতি আমার ভালবাসা প্রকাশ করে ওর কষ্ট বাড়িয়ে দিতে চাই না। ভালবাসা হয়ত এখন খুব জমে আছে কিন্তু যখন অভাব আমাদের ভালবাসায় প্রবেশ করবে তখন ও বলবে আমাকে বিয়ে করে সে নিজেকে খুন করে ফেলল।
কি হলো চুপ করে আছো যে?? ইলমার ডাকে কল্পনা কাটিয়ে বললাম. নাহ। কথাটা হয়ত ইলমা আমার কাছে আশা করেনি। এরকম কথা শুনে ইলমা আর কিছু বলল না। টানা পাঁচ মিনিট তেত্রিশ সেকেন্ড নীরবতা পালনের পর আমি উঠে দাঁড়ালাম। এখানে আর থাকা যাবে না। টিউশনে যেতে হবে। টিউশনে গেলে হালকা পাতলা নাস্তা দেয়। তাই ইলমাকে বললাম.বাবা মা যার সাথে বিয়ে দিচ্ছে তাকে নিয়ে সুখী হও। ভাল থেকো। কথাটা বলেই চলে আসি সেখান থেকে। ইলমার চোখের জল দেখতে হবে
0 Comments